কাল-কাল করে কলিজা ভুনা সকালে রুটির সাথে অসাধারণ লাগে, আমার ঘরে সবাই খুব পছন্দ করে। তবে আমার স্বামীর ডায়াবেটিস থাকায় এখন কলিজা ভুনার মত রেসিপিগুলো এড়িয়ে চলি আমরা। অনেকদিন পর কোরবানীর ঈদের দিন এই রেসিপিতে গরুর কলিজা ভুনা করেছি আমার ঘরে। কলিজা ভুনা রেসিপিটি গরু কিংবা খাসীর কলিজা যেকোনটা দিয়েই করতে পারেন।
অনেকেই হয়ত কলিজা খেতে পছন্দ করেননা, তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলাম আগেই। আপনাদের এই অপছন্দের যে কারণই থাক, আমার মনে হয়েছে কলিজা রান্নার পর এর কাঁচা (আঁশটে) গন্ধটাই হয়ত অনেকের বিরক্তির কারণ। তবে আমার হাতে কলিজা রান্না আমার ঘরে সবাই খুব পছন্দ করেন। অনেক আগে ঈদের দিন শ্বাশুড়ি কলিজা ভুনা করতেন, তখন একান্নবর্তী পরিবারে গরুর পাশাপাশি অন্তত দুটো খাসী (বা ছাগল) কোরবানী হত। আমার শ্বশুর নিজ হাতে খাসীর চামড়া ছাড়াতেন, পশু জবাইয়ের ঘন্টা খানেকের মধ্যেই মাংস আর কলিজা পাঠিয়ে দিতেন অন্দর মহলে। ওইদিকে তাজা মাংসের ঝোল, কলিজা ভুনা আর হাতে বানানো চালের রুটি করে সবাইকে ডেকে পাঠানো হত। শ্বশুর তার চার ছেলেকে নিয়ে খেতে বসতেন, তখনো মাংস পুরোপুরি কাটা হয়নি। খাওয়া শেষ করে আবার সবাই চলে যেতেন মাংস কাটতে। দুপুর নাগাদ পুরুষদের সব কাজ শেষ, আর অন্দর মহলে শ্বাশুড়ীর সাথে আমরা প্রায় সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নাগাদ সেই মাংসের বিলি আর রান্নায় ব্যস্ত সময় কাটাতাম। তখনতো এখনকার মত ফ্রিজ ছিলনা; তাই রান্না করে, জ্বাল দিয়ে আর কখনো রোদে শুকিয়ে মাংস সংরক্ষণ করা হত (মাংস সংরক্ষণের টুকিটাকি নিয়ে একটা লেখা তৈরি হয়ে আছে, সম্ভবত আগামী কোরবানীর ঈদের আগে ওয়েবসাইটে দেব)।
যাই হোক, অনেক গল্প করা হলো, এবার আসুন দেখা যাক কি করে করবেন গরুর কলিজা ভুনা?
উপকরণঃ
- (গরু বা খাসির) কলিজা – ১/২ কেজি
- পেঁয়াজ (কিউব করে কাটা) – ১ কাপ
- আদা বাটা – ১ চা চামচ
- রসুন বাটা – ১ টেবিল চামচ
- পেঁয়াজ বাটা – ২ টেবিল চামচ
- মরিচ গুঁড়ো – ১ চা চামচ
- হলুদ গুঁড়ো – ১/২ চা চামচ
- জিরা বাটা – ১/২ চা চামচ
- ধনে গুঁড়ো – ১ চা চামচ
- লবন – স্বাদমতো
- দারুচিনি, এলাচ, লং একত্রে বাটা – ১/২ চা চামচ
- তেজপাতা – ১ টি
- পাঁচফোড়ন গুঁড়ো – ১ চিমটি পরিমাণ
- দারুচিনি টুকরো – ৩ টি (১ ইঞ্চি সাইজের)
- জায়ফল ও জয়ত্রী বাটা – ১/৩ চা চামচ
- চিনি – ১ চিমটি পরিমাণ
- ভাজা (টালা) জিরা গুঁড়ো – ১/২ চা চামচ
- তেল – ৩ টেবিল চামচ
প্রস্তুত প্রণালীঃ
কলিজা ছোট ছোট টুকরো (১ ইঞ্চি লম্বা আর পাশে ১/২ ইঞ্চি) করে কেটে ভাল করে ধুয়ে নিন। তারপর একটি বাটিতে কলিজার টুকরো গুলো নিয়ে তারমধ্যে তেল, টালা জিরার গুঁড়ো, কিউব করে কেটে রাখা পেঁয়াজ বাদে বাকী সব উপকরণ/মশলা একসঙ্গে মেখে নিন। এবার একটা পাত্রে তেল গরম করে তারমধ্যে মশলা মাখানো কলিজাগুলো দিয়ে অল্প আঁচে নেড়ে কষাতে থাকুন। যতক্ষণ না কলিজার পানি শুকিয়ে তেল ওপরে ঊঠে আসে ততক্ষণ নাড়তে থাকুন। এ অবস্থায় কিউব করে কেটে রাখা পেঁয়াজ দিয়ে দিন, নেড়ে আরো ১৫ মিনিট রান্না করুন। এরপর টালা জিরার গুঁড়ো ছড়িয়ে দিয়ে আরো ৫ মিনিট পরে চুলা থেকে নামিয়ে নিন। গরম গরম কলিজা ভুনা পরিবেশন করুন।
ভূলু, চট্টগ্রাম, ১৯/১১/২০১০
happy wheels
ধন্যবাদ আপা এই রেসিপিটির জন্য।
আমি তো নূতন সংসারী, মোবাইল ফোনে আম্মাকে, বড়বোনকে জিজ্ঞেস করে নিয়ে কিছু কিছু রান্না করতে হয়। কলিজা ভুনা এখনো করিনি, ফ্রিজে তোলা আছে। আমি অনেকটা আপনার মতো করেই এটা করি তবে টালা জিরার গুড়া দেই না। ধনিয়া আর জিরাটা একসাথে গুড়া করে রাখি। আলাদা জিরা দিলে গন্ধ লাগে। আমার শ্বশুর বাড়ি লক্ষ্মীপুর, ঐ বাড়িতে রান্নায় জিরা বাটা দেয়া হয়। মেয়েদের শরীরের জন্য জিরা খাওয়া ভালো।
মাংস সংরক্ষণ করার পদ্ধতি দিলে সবাই খুব উপকৃত হবে বলে আমি মনে করি। আমি কোল্ড বিফ করেছি। এটা সবসময় আমার ভাইজি মুনিয়া ওর ছেলের জন্য করে। বড় মাংসের টুকরা লবণ মাখিয়ে ফ্রিজে (নর্মাল) রেখে দিলাম ২৪ ঘণ্টা। তারপর বেশি পানি দিয়ে চুলায় বসালাম, পানি শুকিয়ে গেলে নামিয়ে ঠাণ্ডা করে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিয়েছি। ক্ষিদা লাগলে চট করে নামিয়ে ছুরি দিয়ে কেটে (স্লাইস করে)পাউরুটির ভেতর দিয়ে খাওয়া যায়।
আপা, অনেক কথা বলে ফেললাম। ভালো থাকবেন। বিকালের নাস্তার (গরুর মাংস দিয়ে) কিছু রেসিপি চাই আপনার কাছ থেকে।
আপনার জন্য শুভকামনা রইল। একদিন আপনিও অনেক ভাল রাধুনী হবেন। জানেন স্বামীরা স্ত্রীদের হাতের ভাল রান্না খেতে খুব পছন্দ করে, প্রতি সপ্তাহেই অন্তত ভাল এবং নতুন কিছু করতে পারেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারেন তবে একটু আগে থেকে জেনে নেবেন।
টালা জিরার ব্যাপারটা আমি আমার মা আর শ্বাশুড়ির কাছ থেকে শিখেছি। ধনেগুঁড়া পরিমিত না হলে বাজে গন্ধ লাগবে, তাই আমি খুব অল্প দেই আর সেজন্যেই জিরাটা আলাদা গুঁড়া করে রাখি। জিরা ধুয়ে রোদে শুকিয়ে বৈয়ামে ভরে রাখি, আর কিছু টেলে পাটায় গুঁড়া করে রাখি। টালা জিরার গুড়া পরিমিত আর সময়মত ব্যবহারে রান্নার স্বাদ আর গন্ধ অনেকগুণ বেড়ে যেতে পারে। নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনীতে টালা জিরার ব্যবহার রান্নায় ভালই হয়।
আচ্ছা জিরা মেয়েদের শরীরে কেমন করে উপকার করে একটু যদি পাঠকদের জন্য বিস্তারিত বলে। আর হ্যাঁ, কোল্ড বিফের পুরা রেসিপিটা দেবেন। মাংস সংরক্ষনের পদ্ধতি নিয়ে লেখাটা দেখি করা যায় কিনা, তাহলে ১ বছর অপেক্ষা না করে এখনই দিয়ে দেব। আর গরুর মাংস দিয়ে বিকেলের নাস্তার জন্য কিছু রেসিপি করা যায় কিনা দেখি, করতে পারলে দিয়ে দেব।
ভাল থাকবেন।
Apa thanks for every recipe.i am kaniz from uk.i h'v been learn most recipe from u.i apprised that. i hope that you will be share lots of new recipe. thanks
কানিজ অনেক ধন্যবাদ। আমার রেসিপিগুলো ভাল লাগে শুনে অনেক ভাল লাগল। এমন সুন্দর করে বললে কার না ভাল লাগে বল? অনেক গুলো রেসিপি করে রেখেছি, ছবি হয়নি, অবশ্য ছবি ছাড়াই রেসিপি দিচ্ছি এখন, পরে ছবি দিয়ে দেব। আমার ছেলেমেয়েরাই হেল্প করে রেসিপিগুলো ইন্টারনেটে দিয়ে দিতে, তাই ওরা একটু ফ্রি হলেই রেসিপি নিয়ে কাজ করি। আমার রেসিপি গুলোর জন্য নতুন সাইট হচ্ছে – vulusrecipe.com নামে।
ভাল থেকো, অনেক শুভকামনা।
Ma'm, I'm new in cooking bengali food for my husband & as im living in australia, mostly i call my mom back in Bangladesh for any kind of recipes,instructions. but as im a born hindu married to a christian (Foriegner who seems to love the bangladeshi cooking style!!), my mom cant help me out with beef recipes (Not that she knows i cook beef at home haha) anyway i was looking online for a beef liver bhuna recipe for the last 3 hours & only now I found ur blog & I have a feeling this will b very helpful! thank u so mch for blogging these wonderful recipes here & a special thanks to ur children who help u put these recipes on ur blog.
Best wishes,
R
প্রিয় R,
অনেক ধন্যবাদ, এত সুন্দর করে প্রসংশা করেছেন খুবই ভাল লাগলো। আমার ছেলে-মেয়েরাও খুব খুশি হয় যখন দেখে অনেক দূর থেকেও বাংলাদেশের মানুষেরা, বাংলা ভাষীরা এই ব্লগ দেখে, মজার সব দেশি খাবার রান্না করে আর নিজেদের গল্পগুলো বলে আপনার মত করে।
গরুর মাংস আমারও খুবই প্রিয়, খুবই। কিন্তু ডাক্তার এখন গরুর মাংস খেতে না করেছে আমাকে, তবুও বাদ দিতে পারিনি, তবে খুব কম। সুযোগ হলেই গরুর মাংসের আরো কিছু রেসিপি দেয়ার ইচ্ছে রইল।
ভাল থাকবেন, আর জানাতে ভুলবেন না কেমন হল আপনার রান্না।
অনেক ধন্যবাদ
আপু আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এই রেসিপির জন্য । আমি মুকাদ্দিস বিল্লাহ । চায়নাতে থেকে লেখাপড়া করছি । বাইরে চাইনীজ খাবার খেতে ভাল লাগে না । তাই মাঝেমাঝে নিজে রান্না করি । আজ জুমার নামাজ শেষে মুসলিম রোডে কলিজা বিক্রি দেখে মনে হল কলিজা ভুনা খাব। তাই দেড় কেজি কলিজা নিয়ে রুমে ফিরলাম। আখন কথা হল কোনোদিন রান্না করিনি, কিভাবে রান্না করব ? নেট এ সার্চ দিয়ে পেলাম আপনার এ রেসিপি । খুবই ভাল লাগলো । আশাকরি আগামীকাল রান্নায় অনেক উপকারে আসবে । আপনাকে অনেক ধন্যবাদ । আপনার আরো অনেক রেসিপি প্রকাশ হোক । আপনার পরিবারের সবার জন্য রইল আমার শুভকামনা ।
অনেক লিখে ফেললাম । নতুন রেসিপি প্রয়োজন হলে আবার আসবো দেখতে আপনার ব্লগ। ভাল থাকবেন । আল্লাহ হাফেজ ।
ভাই মুকাদ্দিস,
অনেক ধন্যবাদ তোমার সুন্দর কথাগুলোর জন্য, বিশেষ করে আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। ওইদিন কি কলিজা ভুনা করতে পেরেছিলে, সে অভিজ্ঞতা এই ব্লগের পাঠকদের সাথে কি শেয়ার করা যায়? তুমি চাইলে তোমার কোন ঝটপট রেসিপিও এই ব্লগে পাবলিশ করতে পারো।
শুভকামনা রইল তোমার জন্য। ভাল থেকো।
ভুলু আপা, কলিজা রান্না করার সময় যে আঁশটে গন্ধ টা আসে, ওটা এরানর উপায় হচ্ছে কাঁচা কলিজা টাকে একটু হলুদ, লবন দিয়ে অল্প পানিতে মিনিট পাঁচেক সিদ্ধ করে নেয়া। তারপর মশলা দিয়ে রান্না করা বা কষানো। এটা আমার মা কে করতে দেখেছি…।
Sumona Sharmeen, এটা একটা ভাল উপায় কলিজার আঁশটে গন্ধটা দূর করার জন্য, আমি করি এটা। তবে ঈদের প্রথম দিন কলিজা রান্নায় আমি এই পথে যাইনা, বলতে পারেন এটা রান্নার একেবারেই নিজস্বতা, আমার শ্বাশুড়িও তাই করতেন।
ও! আমার ব্লগে অতিথি রেসিপি ছাপতে শুরু করেছি, আপনার কোন মজার রেসিপি আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন, খুশি হব।
ভাল থাকবেন।