আপনারা অনেকেই তুলসী গাছ চেনেন, কিন্তু তুলসি পাতার যে কত গুণ রয়েছে তা কি জানেন? আমাদের এই উপমহাদেশে যারা আয়ুর্বেদ শাস্ত্র চর্চা করেন তাদের কাছে তুলসীর গুণাগুণ নতুন কিছু নয়। তুলসীপাতা সিদ্ধ পানি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। শুধু শরীরকেই নয়, এটি বাতাসকেও দূষণমুক্ত করে।
তুলসী, যার অর্থ তুলনা নেই। তুলসী আসলে একটি ঔষধিগাছ। আর আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে তুলসীকে ভেষজের আখ্যা দেওয়া হয়৷ এবার চলুন এই তুলসীর গুণগুলো জেনে নিই ৷
তুলসীর গুণাগুণ
* জ্বর হলে পানিতে তুলসী পাতা, গোল মরিচ এবং মিশ্রী মিশিয়ে ভাল করে সেদ্ধ করুন৷ অথবা তিনটি উপাদান একত্রে মিশিয়ে বড়ি তৈরি করুন৷ দিনে তিন-চার বার ঐ বড়িটা পানি দিয়ে খাবেন৷ জ্বর তাড়াতাড়িই পালাবে৷
* কাশি যদি না কমে তাহলে তুলসী পাতা এবং আদা একত্রে পিষে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খান৷ উপকার পাবেন৷
* পেট খারাপ হলে গুনে গুনে তুলসীর ১০ টা পাতা সামান্য জিরার সাথে পিষে ৩-৪ বার খান৷
* মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে দিনে ৪-৫ বার তুলসী পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন৷
* শরীরের কোন অংশ যদি পুড়ে যায়, তুলসী পাতার রস এবং নারকেলের তেল ফেটিয়ে পোড়া অংশে লাগান। এতে জ্বালা কমবে৷ পোড়া জায়গাটাও তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে৷ সেখানে কোন দাগ থাকবে না৷
* ত্বকের চমক বাড়ানোর জন্য, ত্বকের বলীরেখা এবং ব্রণ দূর করার জন্য তুলসী পাতা পিষে মুখে লাগাতে পারেন৷
* বুদ্ধি এবং স্মরণ শক্তি বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন ৫-৭ টা তুলসী পাতা চিবিয়া খান৷
* প্রস্রাবে জ্বালা-পোড়া হলে তুলসী পাতার রস ২৫০ গ্রাম দুধ এবং ১৫০ গ্রাম পানির মধ্যে মিশিয়ে খেতে পারেন৷
* ত্বকের সমস্যা দূর করতে তিলের তেলে তুলসী পাতা দিয়ে হালকা গরম করে ত্বকে লাগান৷
তেজস্ক্রিয়তা নিরাময় করবে তুলসী !
একটা সময় তুলসী পাতা ঠান্ডা, সর্দি, কাশির মতো অসুখের পথ্য হিসেবে ব্যবহ্রত হতো। এবার এই তুলসী পাতায় বড় ধরনের গুণাগুণের খোঁজ পেয়েছেন ভারতের বিজ্ঞানীরা। তাঁরা দাবি করছেন, তুলসীপাতা ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয়তা নিরাময়ের ওষুধ হিসেবে কাজ করবে। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে ভারতের বিজ্ঞানীরা তেজস্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে এর কিছু কার্যকারিতা খুঁজে পেয়েছেন।
ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (ডিআরডিও) গবেষকেরা তুলসীপাতা থেকে একটি আয়ুর্বেদিক (হারবাল) ওষুধ তৈরি করেছেন। ওষুধটি তেজস্ক্রিয়তায় আক্রান্ত রোগীদের নিরাময়ে ব্যবহার করা সম্ভব হবে। ওই ওষুধের কার্যকারিতা যাচাই করতে দ্বিতীয়বারের মতো গবেষণা করা হচ্ছে।
গবেষকদের মতে, তুলসীপাতায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট নামের একটি উপাদান আছে। এর মাধ্যমে তেজস্ক্রিয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলোকে সারিয়ে তোলা সম্ভব।
বাণিজ্যিকভাবে উত্পাদনের আগে ওষুধটির আরও বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করা হবে। ডিআরডিওর প্রধান নিয়ন্ত্রক ডব্লিউ সেলভামুর্তি জানান, প্রাণীদের ওপর ওষুধটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে যে ফলাফল পাওয়া গেছে, তা খুবই আশাব্যঞ্জক। তিনি আরও বলেন, বিশ্বে এই প্রথমবারের মতো তেজস্ক্রিয়তায় আক্রান্তদের চিকিত্সায় ব্যবহ্রত হবে তুলসী। ওই ওষুধটি মানুষের পাশাপাশি অন্যান্য প্রাণীর চিকিত্সায় ব্যবহার করা যাবে।
তুলসী থেকে তেজস্ক্রিয়তা নিরাময়ের এই ওষুধ তৈরিতে সাত কোটি রুপির প্রকল্প হাতে নিয়েছে ভারতের সরকার।
সতর্কতাঃ এই লেখায় বর্ণিত পরামর্শগুলো কোন চিকিৎসকের পরামর্শ নয়।
লেখাটি সংকলণ করেছেন শাহজাহান সিরাজ
[তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া, বিভিন্ন ওয়েব সাইট এবং প্রথম আলো]