মরক্কোর পুদিনা চা (Moroccan Mint Tea)

মরক্কোর ঐতিহ্যবাহি পুদিনা চা

ছবিঃ মরক্কোর ঐতিহ্যবাহি পুদিনা চা (ছবি ক্রেডিটঃ 123rf.com)

“মরক্কোর ঐতিহ্যবাহি পুদিনা চা” – এই সপ্তাহের বিশেষ রেসিপি পোষ্ট। এই সিরিজে পরবর্তিতে আরো রেসিপি যোগ হবে।

“আতাই চা”, মরক্কোর ঐতিহ্যবাহি পুদিনা চাঃ

মরক্কোর একটি বিখ্যাত চা হলো “আতাই চা” (أتاي‎, Atāy), এটি মরক্কোর পুদিনা চায়ের আরবীয় নাম। তৈরি হয় পুদিনা পাতা দিয়ে। মরক্কোর ঘরে ঘরে দিনভর অতিথি আপ্যায়নে পুদিনা পাতার চায়ের প্রচলন বহুদিনের। ঘরের বাহিরেও বাণিজ্য কেন্দ্রে ক্রেতাদের খুশি করতে কিংবা ব্যবসায় গুলো তাদের ক্লায়েন্টদের সাথে মিটিং-এ এই চা পরিবেশন করে থাকে।

“বৃহত্তর মাগরেব” অঞ্চল তথা আফ্রিকার উত্তর-পশ্চিমের দেশ মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, লিবিয়া এবং মৌরিতানিয়া জুড়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রচলিত এই পুদিনা চা, যা “মাগরেবি পুদিনা চা (Maghrebi Mmint Tea)” নামেও প্রচলিত। “মাগরেবি পুদিনা চা” কিংবা “মরক্কোর পুদিনা চা” আসলে একধরনের ঐতিহ্যবাহি “সবুজ চা (Green Tea)” যা পুদিনা পাতার সাথে চিনির মিশ্রণে তৈরি হয়। তবে তৈরির পদ্ধতিই একে ভিন্নতা দিয়েছে।

উত্তর আফ্রিকা এবং পুরো আরব জুড়ে এই পুদিনা চায়ের প্রচলন থাকলেও, “মরক্কোর পুদিনা চা” নামেই এটি অধিক পরিচিত। স্পেনেও এটি একই নামেই প্রচলিত এবং জনপ্রিয়। শুধু স্পেন নয়, দক্ষিণ ফ্রান্সেও একই রকম চায়ের প্রচলন রয়েছে, তবে সেখানে গরমে ঠান্ডা পুদিনা চা’ই বেশি প্রিয়।

Moroccan man serving mint tea at the "Al Fassia" restaurant in the Palais Jamai, Fes, Morocco

“মরক্কোর ঐতিহ্যবাহি পুদিনা চা” পরিবেশন করা হচ্ছে আল ফাসসিয়া রেস্টুরেন্টে

পুদিনার সতেজতা আর সাথে সবুজ চায়ের উজ্জ্বল রঙ – এ দুটো মিলে-মিশে মরক্কোর পুদিনা চা গরমের দিনে আপনাকে স্বস্তি দেবে। আর বরফ-শীতল পুদিনা চা হলেতো কথাই নেই। পরিবেশনের জন্য মরক্কোর লোকেরা স্বচ্ছ কাঁচের গ্লাসে এই চা পরিবেশন করে থাকে, আর গ্লাসের ভিতরে পাতাসহ পুদিনার তাজা ঢাল খাড়া করে বসিয়ে দেয়।

ঐতিহ্যগত ভাবে, মরক্কোতে পুদিনা চা পরিবেশনের সময় উপর থেকে গ্লাসে চা ঢালা হয়, এতে প্রতিটা গ্লাসে ফেনার লেয়ার তৈরি হয় আর চা কিছুটা ঠান্ডাও হয় যাতে অতিথিরা পরিবেশনের সাথে সাথেই চায়ে চুমুক দিতে পারেন।

মরক্কোতে পুদিনা চা পরিবেশন

মরক্কোতে চা পরিবেশনের সময় উপর থেকে এভাবেই গ্লাসে  ঢালা হয়

ইন্টারনেটের সহযোগিতায় আপনাদের জন্য, মরক্কোর পুদিনা চায়ের (Moroccan Mint Tea) এই রেসিপিটি তৈরি করেছি। মূল উপাদান ঠিক রেখে, মরক্কোর মানুষ বিভিন্ন ভাবে এই পুদিনা চা তৈরি করে থাকে, তবে স্বাদ এবং গন্ধে তেমন তফাৎ হয়না। চা বানানোর জন্য মরক্কোর লোকেরা কারুকাজ করা ঐতিহ্যবাহি মেটাল টি পট ব্যবহার করে, আর পরিবেশন করে কারুকাজ করা ঐতিহ্যবাহি কাঁচের গ্লাসে। এসবই সেখানে রেওয়াজ বলতে পারেন।

মরক্কোর ঐতিহ্যবাহি পুদিনা চায়ের সেট

মরক্কোর ঐতিহ্যবাহি পুদিনা চায়ের সেট, এই পট এবং গ্লাসেই পুদিনা চা পরিবেশন করা হয়

চলুন এবার রেসিপিটা দেখি। সবশেষে একটি YouTube ভিডিও যোগ করা হয়েছে সবার সুবিধার জন্য।

“মরক্কোর পুদিনা চা” রেসিপিঃ

প্রস্তুতির সময়ঃ ১৫ মিনিট
খেতে পারবেনঃ ৬ জন / ৬ কাপ

মরক্কোর ঐতিহ্যবাহি পুদিনা চা তৈরি করবেন যেভাবে

মরক্কোর ঐতিহ্যবাহি পুদিনা চা তৈরি করবেন যেভাবে (ছবি ক্রেডিটঃ mint love social club)

মরক্কোর ঐতিহ্যবাহি পুদিনা চা তৈরি করবেন যেভাবে

মরক্কোর ঐতিহ্যবাহি পুদিনা চা তৈরি করবেন যেভাবে (ছবি ক্রেডিটঃ mint love social club)

উপকরণঃ

২ কাপ পুদিনা পাতা (বা পুদিনার ৩টা ঢাল/গাছ)
১/৪ কাপ চিনি (অথবা স্বাদমতো)
২ টেবিল চামচ মধু
২ টেবিল চামচ সবুজ চা পাতা (টি ব্যাগ দিয়েও করতে পারবেন)
৬ কাপ ফুটানো পানি

প্রস্তুত প্রণালীঃ

কেটলি বা চায়ের পাতিলে পানি ফুটিয়ে নিন, টগবগ করে ফুটবে, ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়। এবার ফুটানো পানিতে চা পাতা দিন। ১ মিনিট ধরে চুলায় রেখে জ্বাল দিন। চুলা থেকে নামিয়ে পুদিনা আর চিনি দিন। ঢাকনা দিয়ে ৫ মিনিটের মত কেটলিটা চুলায় জ্বাল দিন, অল্প আঁচে, এতে পুদিনার ঘ্রাণ এবং নির্জাস ছড়াবে পানিতে। এবার নামিয়ে নিন। ভাল করে নেড়ে নিয়ে স্বচ্ছ কাঁচের গ্লাসে পরিবেশন করুন। সাজানোর জন্য উপরে ২/৩টা পাতা সহ পুদিনার ঢাল (ঢালের আগা) গ্লাসের উপরে দিতে পারেন।

গরম অথবা ঠান্ডা খেতে পারেন। চিনির বদলে মধু ব্যবহার করতে পারেন, অসাধারন লাগবে।

 

“প্রথম গ্লাসটা জীবনের মত তেতো;
দ্বিতীয় গ্লাসটা ভালবাসার মতই শক্তিশালী;
আর তৃতীয় গ্লাসটা মৃত্যুর মত শীতল।”

– মরক্কোর পুদিনা চা নিয়ে প্রবাদ

ভূলু, চট্টগ্রাম, ১৮/০৭/২০১৫

 

এই রেসিপিটি তৈরি এবং গবেষণায় সাহায্য করেছেন শাহজাহান সিরাজ, তিনি এই ব্লগের একজন অতিথি লেখক।

happy wheels

About ভূলু | ভূলু'স রেসিপি

আমি 'ফজলুর নূর ভূলু'। আমার রান্নাঘরের অরিজিনাল সব রেসিপি নিয়েই আমার এই ব্লগ - "ভূলু'স রেসিপি"। এই রেসিপি ব্লগের মাধ্যমে আমি দেশি খাবার আর তার অতুলনীয় স্বাদের বৈচিত্র তুলে ধরতে চাই। সাথে আমাদের আঞ্চলিক এবং ঐতিহ্যবাহী রান্নাগুলোও থাকবে। ভবিষ্যতে এইসব রেসিপি আর ব্লগের গল্পগাঁথা নিয়ে একটি বই প্রকাশের ইচ্ছে আছে।