ব্লগে সত্যিই মুরগীর মাংসের রেসিপি খুব একটা দেয়া হয়নি, অনেক আগে কুচো আদায় মুরগী রেসিপিটি দিয়েছিলাম, তারপর আমার মতো করে মোরগ পোলাও আর কয়দিন আগে (সেপ্টেম্বর ২০১০) দৈনিক দিনের শেষে পত্রিকার জন্য করেছিলাম মোরগ মোসাল্লাম স্পেশাল ঈদ রেসিপিটি।
মুরগী রান্নার প্রক্রিয়াটা সহজ বলেই হয়ত এই দিকে খেয়াল করা হয়নি। তাই এই ঈদে কয়েকটি রেসিপি করার চেষ্টা করেছি, আপনাদের ভাল লাগবে। আসলে অনেক রকম করেই আমরা মুরগী রান্না করি। গ্রামে থাকতে দেশি মুরগী এবং মোরগের নানা রকম রান্নার সাথে পরিচয় মায়ের হাত ধরে। পরে শহুরে ফার্মের মুরগী রান্নায় সেই প্রথাগত রেসিপি থেকে বেরিয়ে আসতে হয়েছে। তৈরী করতে হয়েছে মুরগী রান্নার নতুন প্রণালী। ফার্মের মুরগীগুলো দেশি মুরগীর মত এতটা শক্ত-সামর্থ হয়না, ফার্মের মুরগী একটু নাজুক প্রকৃতির, রান্নার সময় অল্পতেই মাংস ভেঙে যায়। সেজন্য ফার্মের মুরগী রান্নায় আমি কিছু ব্যাপার মেনে চলি, রেসিপিগুলোতে তার উল্লেখ থাকবে খেয়াল করবেন। তবে একই প্রক্রিয়ায় দেশি মুরগীও রান্না করতে পারবেন, তেমন অসুবিধা হবেনা। যারা অনভিজ্ঞ তারা কোথাও অসুবিধা হলে মন্তব্যের ঘরে লিখে জানাবেন।
বিভিন্ন ভাবেই আমরা রোস্ট করি, আর চিকেন রোস্ট বললে আস্ত মুরগীর রোস্টই হয়ত সবার মনে ভেসে ওঠে। এই রেসিপিটি আস্ত মুরগী টুকরো করে করা, টুকরোগুলো না বড় না ছোট, ঘরে করা অনেক সহজ। আসলে সহজ করার জন্যই এমন টুকরো করেছি।
এবার আসুন দেখে নিই মুরগীর কাটা মাংসের রোস্ট করতে কি কি লাগবে?
উপকরণঃ
- মুরগি – ১২ টুকরা (বড়, ছবি দেখুন)
- পেঁয়াজ কুচি – ১ কাপ
- পেঁয়াজ বাটা – ১ কাপ
- রসুন বাটা – ১ টেবিল চামচ
- আদা বাটা – দেড় চা চামচ
- জিরা বাটা – ১ চা চামচ
- ধনে গুঁড়া – ১ চা চামচ
- হলুদ গুঁড়া – ১/২ চামচ
- মরিচ গুঁড়া – ১ চা চামচ
- সয়াসস – ১ চা চামচ
- টক দই – ২ টেবিল চামচ
- দারুচিনি – ৫ টুকরা (২ ইঞ্চি)
- লবঙ্গ – ৪ টি
- এলাচ – ৪ টি
- তেজপাতা – ২ টি পাতা
- তেল – দেড় কাপ
- পানি – ৫ কাপ (গরম পানি)
- জয়ফল, জয়ত্রী বাটা – ১/৩ চা চামচ
- লবন – স্বাদমতো
- চিনি – ১/২ চা চামচ
- লেবুর রস – ১ চা চামচ
প্রস্তুত প্রণালীঃ
মুরগির টুকরাগুলো ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। এবার মুরগির টুকরার সঙ্গে হলুদ ও লবণ মেখে ৫-১০ মিনিট রেখে দিন। ৫-১০ মিনিট পর কড়াইতে তেল গরম করে মুরগির টুকরাগুলো এক এক করে ভেজে আলাদা প্লেটে ঊঠিয়ে রাখুন (নীচের ছবি দেখুন)। খেয়াল রাখবেন তেল যেন পুড়ে না যায়।
আপনার ইচ্ছেমতো সাজিয়ে পরিবেশন করুন।এবার একই তেলে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে নেড়ে ভাজুন। পেঁয়াজ বাদামী রং হলে এতে সয়াসস, টকদই, চিনি, লেবুর রস বাদে উপরের বাকী মসলা দিয়ে ভালভাবে কষিয়ে ভেজে রাখা মুরগির টুকরাগুলো দিয়ে অল্প আঁচে আরও ভালভাবে কষান। ভাল করে কষানো হলে এতে গরম পানি দিন এবং অল্প আঁচে ঢেকে রান্না করুন। কিছুক্ষণ পরপর ঢাকনা খুলে নেড়ে চেড়ে দিন, এ সময় মাংস উলটে দেবেন। ঝোল ঘন হয়ে এলে লেবুর রস, টকদই, সয়াসস ও চিনি দিন। ১০-১৫ মিনিট পর মাংস সিদ্ব হয়ে মাখামাখা হয়ে তেল উপরে উঠে আসলে নামিয়ে নিন।
ভূলু, চট্টগ্রাম
১৪/০৯/২০১০ (ঈদুল ফিতর ২০১০)
পরবর্তী রেসিপিঃ কাঁচামরিচে সাদা মুরগী
ইচ্ছেমতো না সাজিয়ে কিভাবে সাজাতে হবে বলে দিলে ভাল হত ।
পরিবশনের সময় সাজানোর ব্যাপারটা নিয়ে এখন সবাই খুব সচেতন। আর এক্ষেত্রে সবার নিজ নিজ চিন্তা ভাবনা কাজ করে, তাই ইচ্ছেমতো সাজাতে বলেছি। আর আমি খাবার টেবিলে পরিবেশনের সময় অনেক বেশি সাজাতে পছন্দ করিনা, শুধু আকর্ষনীয় করে তোলার চেষ্টা করি। একাজটা আমার মেয়েরাই করে বেশিরভাগ সময়ে।
ধন্যবাদ ভাই মন্তব্যের জন্য।
chinese vegetable er receipe dile upokrito hotam…
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। আমি চেষ্টা করব চাইনিজ ভেজিটেবল এর রেসিপি দিতে। তবে তা হয়ত কিছুটা দেশের ফ্লেভার নিয়ে তৈরি হবে। দেখা যাক।
ভাল থাকবেন।
এই রেসিপিটা আমার ভীষণ প্রিয়, অসাধারণ হয়। আপনার কাছে সত্যিই কৃতজ্ঞ।
ভাই মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, খুবই ভাল লাগল জেনে।
এইরকম রেসিপিগুলো নিয়ে আপনাদের অভিজ্ঞতা যদি আমাকে জানান তাহলে এই ব্লগে পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরতে চাই আমি। আপনার মত করে যদি লিখে পাঠান, তাহলে আমি চেষ্টা করব তা ব্লগে পাবলিশ করতে।
পাঠকরা নতুন সব চমৎকার অভিজ্ঞতা জানতে পারবেন।
ভাল থাকবেন।
প্রথমেই ধন্যবাদ এই অনবদ্য ব্লগের জন্য। এবার আমার বহুদিনের এক কৌতুহলের কথা বলি। আমি পশ্চিমবঙ্গের মানুষ হলেও আমাদের আদি বাড়ি ছিল নোয়াখালি জেলায়। কিন্তু রিফুইজি হয়ে বাপ কাকারা চলে আসায় এখন কলকাতারই বাসিন্দা।
এবার আমার প্রশ্ন। পোলাও কথাটাটি আসল নাম নাকি পল্লান্ন। পল মানে মাংস এবং অন্ন মানে ভাত। সেই থেকেই পোলাও। এই রান্নার কথা মায়ের মুখে শুনেও ছিলাম। কিন্তু মাকে করতে জানেন বাংলার হারিয়ে যাওয়া এই ঐতিহ্যবাহী রান্না পোলাও-এর রেসিপি পাওয়া যায় কী? যদি যায়, তবে আমার ই মেল করলে কৃতজ্ঞ থাকবো।
ইতি গোরাচাঁদ ব্যানার্জি
কলকাতা
ভাই গোরাচাঁদ ব্যানার্জি,
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমার ব্লগে আসার জন্য, আর সেইসাথে এত সুন্দর করে কথাগুলো বলার জন্যও। আপনার আদি বাড়ি নোয়াখালীতে জেনে আরো ভাল লাগছে। নোয়াখালীর কোন অঞ্চলে আপনাদের বাড়ি ছিল?
আমি আপনার জন্য পোলাওর রেসিপিটি করে এই ব্লগে দিয়ে দেব, আর সেই সাথে চেষ্টা করবো আপনাকে মেইল করে দিতে। পলান্ন কথাটা খুব সুন্দর, পোলাও’র আসল নামটি পলান্ন আমিও জানতাম না।
ভাল থাকবেন।
বিয়েতে যেমন রোস্ট দেয়া হয় আমার সেরকম রোস্ট বানানোর খুবই ইচ্ছে। আপনি কি রেসিপি দিতে পারবেন আপু?
বিয়ে বাড়িতে অনেক বেশি পরিমানে রোষ্ট একত্রে করা হয়, আর তাতে কয়লার দম দেয়া হয়। এতে একটা ধোঁয়া ধোঁয়া (স্মোকি) গন্ধ আসে, যেটা আমাদের ঘরে করা রোষ্টে হয়ত আমরা করিনা। আপনি চাইলে রোষ্ট হয়ে গেলে কিছুক্ষন পাতিলের ঢাকনার উপর কয়লার দম দিতে পারেন।