প্রাচীনকাল থেকেই ঔষধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে পুদিনা পাতা বা Mint। ঔষধের পাশাপাশি খাদ্য ও রূপচর্চার উপাদান হিসেবেও পুদিনা পাতার ব্যবহার সমাদৃত। পুদিনা পাতা মানেই যেন সতেজতা। সালাদ অথবা পানীয়ের স্বাদ বাড়াতে কিংবা সাজাতে, সকালে এক কাপ চায়ে। আহা! পুদিনার সবুজ চাটনির কথা নাইবা বললাম। কতভাবেই পুদিনার ব্যবহার হয় আমাদের রান্নাঘরে আর খাবার টেবিলে। যত দিন যাচ্ছে তত গবেষণা হচ্ছে পুদিনা পাতা ও পুদিনার মতো ভেষজ উদ্ভিদ নিয়ে, আর মানুষ জানছে এর অসাধারণ সব স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে।
পুদিনা পাতার যত স্বাস্থ্য উপকারিতা:
১. আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে পুদিনা পাতা ক্যান্সার প্রতিরোধের ক্ষমতা রাখে। পুদিনা পাতার পেরিলেল অ্যালকোহল যা ফাইটোনিউরিয়েন্টসের একটি উপাদান দেহে ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধিতে বাধা দেয়।
২. পুদিনা পাতার রস শ্বাস-প্রশ্বাসের নালী খুলে দেওয়ার কাজে সহায়তা করে। ফলে যারা অ্যাজমা এবং কাশির সমস্যায় পড়েন তাদের সমস্যা তাৎক্ষণিক উপশমে পুদিনা পাতা বেশ কার্যকরী। খুব বেশি নিঃশ্বাসের এবং কাশির সমস্যায় পড়লে পুদিনা পাতা গরম পানিতে ফুটিয়ে সেই পানির ভাপ নিন এবং তা দিয়ে গার্গল করুন, আরাম পাবেন।
৩. মাথা ধরা ও বমি ভাব এর সমস্যা দূর করতে পুদিনা পাতা হাতে নিয়ে একটু থেঁতলে নিন। তারপর নাকের কাছে ধরুন। পুদিনা পাতার সতেজ ঘ্রাণ আপনাকে নিমেষেই সতেজ করে তুলবে। বাজারে পুদিনার মেন্থল ও পেপারমেন্ট পাওয়া যায়। এগুলো শ্বাসকষ্ট, খুসখুসে কাশি হলে ব্যবহারে উপকার পাওয়া যায়। যাদের বুক ধড়ফড় করে তারা পুদিনাপাতা খেলে উপকার পাবেন।
৪. পুদিনা পাতার রস তাৎক্ষণিক ব্যথানাশক উপাদান হিসেবে কাজ করে। পুদিনা পাতার রস চামড়ার ভেতর দিয়ে নার্ভে পৌঁছে নার্ভ শান্ত করতে সহায়তা করে। তাই মাইগ্রেন বা আধকপালে মাথা ধরায় বা জয়েন্টে ব্যথা উপশমে পুদিনা পাতা ব্যবহার করা যায়। মাথা ব্যথা হলে পুদিনা পাতার চা পান করতে পারেন, এটি ব্যথা সারাতে ওস্তাদ! পুদিনা চা তৈরি করতে পুদিনা পাতাগুলো পানিতে আধঘণ্টা ধরে সেদ্ধ করুন। এরপর পাতা নিঃসৃত পানি ঠান্ডা করে চা হিসেবে পান করুন। অথবা তাজা কিছু পুদিনা পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন। জয়েন্টে ব্যথায় পুদিনা পাতা বেটে প্রলেপ দিতে পারেন।
৫. পুদিনা পাতায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্টসের চমৎকার গুনাগুণ যা পেটের যে কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারে খুব দ্রুত। পুদিনাপাতার সালাদ খেলে পেটে গ্যাস হয় না। হজম হয়। যারা হজমের সমস্যা এবং পেটের ব্যথা কিংবা পেটের অন্যান্য সমস্যায় ভুগে থাকেন তারা খাবার পর এককাপ পুদিনা পাতার চা খাওয়ার অভ্যাস করুন। ৬/৭টি তাজা পুদিনা পাতা গরম পানিতে ফুটিয়ে মধু মিশিয়ে খুব সহজে পুদিনা পাতার চা তৈরি করতে পারেন ঘরে।
৬. পুদিনা ত্বকের যে কোনো সংক্রমণকে ঠেকাতে অ্যান্টিবায়োটিকের কাজ করে। শুকনো পুদিনা পাতা ফুটিয়ে পুদিনার পানি তৈরি করে ফ্রিজে রেখে দিন। এক বালতি পানিতে দশ থেকে পনেরো চামচ পুদিনার পানি মিশিয়ে গোসল করুন। এর ফলে গরমকালে শরীরে ব্যাকটেরিয়া জনিত বিশ্রী দুর্গন্ধের হাত থেকে রেহাই পাবেন, কেননা পুদিনার অ্যাস্ট্রিঞ্জেন্ট গুণ অতুলনীয়। ঘামাচি, অ্যালার্জিও হবে না।
৭. রোদে পোড়া ত্বকের জ্বালাপোড়া কমাতে পুদিনা পাতার রস ও অ্যালোভেরার রস একসঙ্গে মিশিয়ে ত্বকে লাগান। পনেরো মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
৮. গোলাপ, পুদিনা, আমলা, বাঁধাকপি ও শশার নির্যাস একসঙ্গে মিশিয়ে টোনার তৈরি করে মুখে লাগালে তা ত্বককে মসৃণ করে তোলে।
৯. পুদিনা পাতা মেয়েদের জন্য বেশ ভালো, বিশেষ করে মেনোপজের পর। মুখের অবাঞ্চিত লোম কমায়, তবে মাথার চুল বাড়ায়। পুদিনা মেয়েদের রক্তশূন্যতা পূরণ করে। প্রসূতি মায়ের বুকে দুধ বাড়ায়।
১০. ব্রণ দূর করতে ও ত্বকের তৈলাক্তভাব কমাতে তাজা পুদিনাপাতা বেটে ত্বকে লাগান। দশ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। ব্রণের দাগ দূর করতে প্রতিদিন রাতে পুদিনা পাতার রস আক্রান্ত স্থানে লাগান। সম্ভব হলে সারারাত রাখুন, কমপক্ষে ২/৩ ঘণ্টা। তারপর ধুয়ে ফেলুন। মাস খানেকের মাঝেই দাগ দূর হবে।
১১. পুদিনার শেকড়ের রস উকুননাশক হিসেবে খুবই কার্যকরী, এমনকি পাতাও। পুদিনার পাতা বা শেকড়ের রস চুলের গোড়ায় লাগান। এরপর একটি পাতলা কাপড় মাথায় পেঁচিয়ে রাখুন। এক ঘণ্টা পর চুল শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত দু বার এই কাজটি করুন। এক মাসের মধ্য উকুনমুক্ত চুল।
১২. শরীর ঠাণ্ডা রাখার একটি বিশেষ গুণ পুদিনার মধ্যে আছে। গোসলের কিছুক্ষণ আগে পানির মধ্যে কিছু পুদিনা পাতা ফেলে রাখুন। সেই পানিতে গোসল করলে শরীর ও মন চাঙ্গা থাকে। এ ছাড়া কয়েক ফোটা পুদিনার তেল পানির মধ্যে মিশিয়েও গোসল করতে পারেন।
১৩. যারা প্রস্রাবে সমস্যায় ভুগছেন তারা এক গ্লাস পানিতে কয়েক ফোঁটা পুদিনা পাতার রস, সামান্য লবণ ও অল্প চিনি দিয়ে শরবত করে খান প্রস্রাব পরিষ্কার হবে।
১৪. পুদিনা পাতা পিষে রস করে তাতে দু’তিন ফোঁটা লেবুর রস দিয়ে তা পান করলে ক্লান্তিভাব দূর হয়। কেউ অজ্ঞান হয়ে পড়লে তার নাকের কাছে তাজা পুদিনা পাতা ধরুন, জ্ঞান ফিরে আসবে। হঠাৎ সানস্ট্রোক করলে পুদিনা পাতার শরবত খেলে উপকার পাবেন।
পুদিনা পাতা আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত ভালো একটি উপাদান। পুদিনা পাতা সহজলভ্য। বাড়ির ছাদে, বারান্দায় এমনকি জানালার কার্ণিশে টবে পুদিনা লাগিয়ে ঘরেই নিয়মিত পুদিনা পাতা পেতে পারেন। এত উপকারি এবং সহজলভ্য এই পাতাটি আমরা প্রতিদিন খেতে পারি।
[তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া, বিভিন্ন ওয়েব সাইট, প্রথম আলো, সমকাল, আমাদের সময়]
happy wheels