ঢেঁড়শ, পুষ্টিগুণে ভরা উপকারি সবজি

ঢেঁড়শ এখন প্রতিদিনই খেতে পারেন, বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহও দেখা যায়। এই সবজিটি বহু গুণে গুণান্বিত, বিশেষ করে কোষ্ঠ্য পরিস্কারে এবং ডায়াবেটিক রোগিদের জন্য খুবই উপকারি। তাই ক’দিন ধরেই ভাবছিলাম ঢেঁরশের কটা রেসিপি দেয়া যায় ভূলু’স রেসিপি ব্লগে। আর ওয়েবে দেখছিলাম এই ঢেঁড়শ আমাদের আর কি কি উপকার করে, খুজতে খুজতে জানা গেল ঢেঁড়শ খাওয়ার অনেকগুলো উপকারি দিক। জেনে নিন – ঢেঁড়শ কেন খাবেন? আপনাদের জন্য এই লেখাটি সংকলন করেছেন শাহজাহান সিরাজ।

ঢেঁড়শ কেন খাবেন

ছবিঃ ঢেঁড়শ (ক্রেডিটঃ উইকিপিডিয়া)

ঢেঁড়শের সংস্কৃত নাম রোমশ। আয়ুর্বেদ মতে এ ফলটির রসশক্তি ও বীর্যশক্তি উভয়ই কার্যকর। রসগত স্বভাবে এটি ভেদক অর্থাৎ কোষ্ঠ পরিষ্কারক, পিত্তবিকার নাশক, রুচিবর্ধক তবে বায়ুবর্ধকও বটে; রুক্ষ, মূত্রবর্ধক ও অশ্মরী দূরীকারক অর্থাৎ শরীরে জমা পাথর গলিয়ে বের করে দেয়। এশিয়ার কোথাও ইংরেজিতে একে বলা হয় ওকরা (Okra) বা লেডিস ফিঙ্গার (Ladies’ finger)। নাতিশীতোঞ্চ এবং তুলনামূলক গরম প্রবণ এলাকায় সারা পৃথিবীতেই ঢেঁড়শের চাষ হয়।

ঢেঁড়শের পুষ্টিগুণঃ

উচ্চ মাত্রার ফাইবার (Fiber), ভিটামিন এ এবং সি সমৃদ্ধ উত্তম ভেষজ গুণের রোমশ ঢেঁড়শ নামক এ সবজিটি ডায়াবেটিসে বিশেষ উপকারী, প্রেসারের অসুখ সারায়, পুষ্টিগুণে ভরপুর। এটি মেধা বাড়ায়; তবে বাতবর্ধকও। ঢেঁড়শ ভিটামিন বি (Vitamin B) এবং কে (K), ক্যালসিয়াম (Calcium), পটাসিয়াম (Potassium), আয়রন (Iron), জিঙ্ক (Zinc) ছাড়াও ম্যাগনেশিয়াম (Magnesium) এবং মেঙ্গানিজ (Manganese) এর ভাল উৎস হতে পারে। বেটা ক্যারটিনের মত এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে এই ঢেঁড়শে।

ঢেঁড়শের স্বাস্থ্য উপকারিতাঃ

ঢেঁড়শ বিভিন্ন অসুখের চিকিৎসায় ভেষজ উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। নিচে এর ব্যবহার বিধি দেয়া হলো –

দাস্ত অপরিষ্কারঃ দাস্ত অপরিষ্কার, খাওয়ার সাথে সাথে সারা শরীরে কামড়ানি, এমন অবস্থায় বীজ বাদ দিয়ে ২০-২৫ গ্রাম ঢেঁড়শ ৩ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে নিয়ে সে পানি মাঝে মাঝে খেতে হবে। তাতে অসুবিধাটা চলে যাবে, সে সাথে প্রস্রাবও পরিষ্কার হবে।

প্রস্রাবের উগ্র গন্ধঃ কাঁচা ঢেঁড়শ বীজ বাদ দিয়ে ২৫-৩০ গ্রাম নিতে হবে। তারপর ১ লিটার পানিতে সিদ্ধ করে আন্দাজ ২৫০-৩০০ মিলিলিটার থাকতে নামিয়ে ছেঁকে ঠাণ্ডা করে পানিটা সারা দিনে দুই-তিনবারে পান করতে হবে। এভাবে কয়েক দিন খেলে দেখা যাবে উগ্র গন্ধটা কমে গেছে।

প্রস্রাবের স্বল্পতাঃ যারা পানি কম পান করে না, অথচ পান করার পরিমাণ মতো প্রস্রাব হয় না, তারা বীজ বাদ দিয়ে কাঁচা ঢেঁড়শ ৪-৫ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে দেড়-দুই কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে চট্চটে সে পিচ্ছিল পানি পান করলে প্রস্রাব সহজভাবে হবে ও পরিমাণে বেড়ে যাবে।

রক্তশূন্যতাঃ ঢেঁড়শ রক্তে লোহিত কণিকা তৈরিতে ভূমিকা রাখে, যা শরীরে রক্তশূন্যতা রোধে সাহায্য করে।

খুসখুসে কাশিঃ বীজ বাদ দিয়ে কাঁচা ঢেঁড়শ কুচিকুচি করে কেটে কড়া রোদে শুকিয়ে সেগুলো গুঁড়ো করে ৫-৭ গ্রাম পরিমাণে নিয়ে চিনির কড়া রসে মেড়ে মোমবাতির মতো পাকিয়ে রাখতে হবে। গলা খুসখুস করলেই একটু চুষে খেলে এ কাশি চলে যাবে। যেকোনো বয়সের লোক এটি খেতে পারে এবং সাথে সাথে উপকার পাওয়া যায়।

এজমাঃ ঢেঁড়শের উচ্চ মাত্রার এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি এজমা প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

ডায়াবেটিস বা ব্লাড সুগার (রক্ত শর্করা): রক্তে শর্করা বাড়লে বা বাড়তে থাকলে কালো জামের বিচির গুঁড়ো ১ গ্রাম নিয়ে ৩-৪টি কাঁচা ঢেঁড়শের সিদ্ধ পানির সাথে প্রতিদিন করে কিছু দিন খেলেই এটি আর থাকবে না।

অপুষ্টিঃ রোজ সকালে কয়েকটি নরম ঢেঁড়শ খেলে অপুষ্টি দূর হয়।

আমাশয়ঃ ঢেঁড়শ গাছের মূল পিষে চিনি মিশিয়ে খেলে আমাশয় সারে।

মূত্রদোষঃ ধাতুক্ষরণে মূত্রনালী টিপলে একটি তরল পিচ্ছিল পাতলা আঠা বের হয়। এ ত্রুটি প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের ক্ষরণও হতে পারে। এ রকম ক্ষরণ হলে ২৫-৩০ গ্রাম কাঁচা ঢেঁড়শ (৩-৪ টা মতো) বেটে ঠাণ্ডা পানিতে মিশিয়ে পাতলা কাপড়ে ছেঁকে কয়েক দিন খেতে হয়। এর ফলে দুই-তিন দিনের মাঝে অসুবিধাটা চলে যাবে। তবে হজম শক্তি ভালো না থাকলে কাঁচা বেটে না খেয়ে পানিতে সিদ্ধ করে ছেঁকে খাওয়া ভালো।

ঢেঁড়শ কিভাবে খাবেন?

বাজারে কিনতে গেলে ছোট ঢেঁড়শ কিনবেন, বড় ঢেঁড়শের আঁশ শক্ত থাকবে, খেতে ভাল লাগবে না। দেখবেন ঢেঁড়শ যেন তাজা আর সবুজ থাকে। থেতলানো কিংবা কালচে হয়ে যাওয়া ঢেঁড়শ কিনবেন না। মুচমুচে ঢেঁড়শ কিনবেন। ঢেঁড়শের সুঁচালো অংশ চাপ দিয়ে ভেঙ্গে দেখুন, খুব সহজে মট করে ভেঙ্গে গেলে বুজবেন ঢেঁড়শ মুচমুচে আর তাজা।

বাজারে অন্য সবজির মতই ঢেঁড়শে কীটনাশক কিংবা অন্য রাসায়নিক থাকতে পারে। তাই কেনার সময় দেখে শুনে কিনুন। কীটনাশক ও রাসায়নিক মুক্ত করার জন্য ঘরে ভিনেগার কিংবা লবন পানিতে ১৫ মিনিট ডুবিয়ে রেখে সেই পানিতেই ঢেঁড়শ গুলো ভাল করে কচলে নিন।

লম্বা লম্বা টুকরা করে ঢেঁড়শ মাছের সাথে রান্না করা যায়। ঢেঁড়শ ভাজি করতে পারেন, আলু সহ কিংবা আলু ছাড়া দুভাবেই করা যেতে পারে। অল্প আঁচে ঢাকনা দিয়ে ঢেঁড়শ ভাজি করলে সবুজ ভাবটা থাকবে, পুড়ে যাবে না, দেখতে ভাল লাগবে। সালাদেও ঢেঁড়শ খেতে পারেন। তবে ঢেঁড়শের জুস বা শরবত করে খেতে পারবেন না, এর পিছলা-আঠালো ভাবটা ভাল লাগবে না। অবশ্য ঢেঁড়শ কেটে টুকরা করে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সেই রস/পানি খেতে পারেন, ডায়াবেটিস রোগিদের সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই ঢেঁড়শ ভেজানো পানি কাজে লাগবে।

সতর্কতাঃ এত উপকারেও সামান্য সতর্ক থাকতে হবে, আপনার কিডনীতে পাথর জনিত কোন সমস্যা থাকলে ঢেঁড়শ খাবেন না। দয়া করে উপরের কোন পরামর্শই ডাক্তারি পরামর্শ হিসেবে গ্রহণ করবেন না।

তথ্য সূত্রঃ বিভিন্ন পত্রিকা এবং উইকিপিডিয়া

happy wheels

About শাহজাহান সিরাজ

শাহজাহান সিরাজ পেশায় একজন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ। খেতে ভালবাসেন। টুকি-টাকি রান্নাও করেন, অবশ্য যখন আর কোন উপায় থাকে না! বৈচিত্রপূর্ণ খাবারে আকর্ষণ তাঁর। বাংলাদেশের রান্না, এখানকার খাবারের বৈচিত্র, স্বাদ আর ঐতিহ্য তাকে মুগ্ধ করে। খাবারের গুণ আর গল্প নিয়ে তিনি "ভূলু'স রেসিপি" ব্লগে লিখছেন।